DECLARATION

প্রকাশিত লেখা বা মন্তব্য সম্পূর্ণভাবেই লেখক/মন্তব্যকারীর নিজস্ব অভিমত এর জন্য ashiqurrahman.blogspot.com ব্লগ কর্তৃপক্ষকে কোনভাবেই দায়ী করা চলবেনা

বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১২

আমরা নই, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ ও সেলিব্রিটিরাই মানুষ

Written by- Faruk Ahmed Mojumdar
Date: 16-02-2012


আমার শিরোনাম দেখে অনেক সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ ও অন্যান্য সেলিব্রিটিরা রাগ করতে পারেন। তাই তাদের কাছে আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

তারিখ ও বার: গত ১৩ জানুয়ারি, ২০১২ শুক্রবার। সময়: সকাল ৬টা। স্থান: টঙ্গী হোসেন মার্কেট।

দিনটা বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রথম দিন ছিল। একজন গার্মেন্টস কর্মী গ্রামের বাড়ী টাঙ্গাঈল যাবে। কারণ ইজতেমা উপলক্ষ্যে ফ্যাক্টরী বন্ধ থাকবে ১ সপ্তাহ্। এখানে (টঙ্গী) স্বামীর সাথে থাকে। একমাত্র পুত্র সন্তান থাকে গ্রামের বাড়িতে নানীর কাছে। আগের দিন রাতে একমাত্র ছেলের জন্য নতুন জামা কিনল সে। সকাল হল, বাড়ী যাওয়ার জন্য তর সইছিল না। স্বামীকে তাড়াতাড়ি করার জন্য বলল। স্বামী বলল “তুমি এগিয়ে গিয়ে বাসস্ট্যান্ডে দাড়াও, আমি আসছি।” মেয়েটি গিয়ে দাড়াল বাসস্ট্যান্ডে। মুহুর্তের মধ্যে একটি চলন্ত ট্রাক এসে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে চাপা দিয়ে চলে যায়। থেতলে যায় সমস্ত দেহ। ইজতেমা উপলক্ষে টহল পুলিশ রাস্তাতেই ছিল। তাই খুব তাড়াতাড়ি পুলিশ এসে লাশটি নিয়ে চলে গেল। সকালের রোদ উঠার আগেই লাশটি চলে গেল হাসপাতালের মর্গে। ২০-৩০ জন মানুষ স্বাক্ষী থাকল সেই ঘটনার। ৫-৬ ঘন্টা রক্তের ছোপ ছোপ দাগ থাকল পিচঢালা রাস্তায়। তার সেটিও মুছে গেল রাস্তার চলন্ত গাড়ির চাকার ঘষায় , ইজতেমা মাঠে জুমআর নামাজ পড়তে আসা মুসল্লীদের পায়ের চাপায় আর ধুলায়।

উপরের ঘটনাটি কোন টিভির ব্রেকিং নিউজে ছিল না। কিংবা ঘটনাটি জায়গা পায়নি কোন পত্রিকার ভিতরের পাতায়। তার জন্য তৈরি করা হয়নি কয়েক হরফের কোন প্রতিবেদন। তার জন্য কেউ মানববন্ধন করেনি। তার হত্যাকারী ট্রাক ড্রাইভারকে ধরার জন্য কোন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আল্টিমেটাম দেয় নাই। কোন সাংবাদিক তার জন্য রাস্তায় ক্যামেরা রেখে প্রতিবাদ করে নাই। তার সন্তানের দায়িত্ব নেওয়ার কেউ নেই। আচ্ছা বলুন তো, রুনি-সাগরের সন্তান মেঘ ও জনৈক গার্মেন্ট কর্মীর ছোট শিশুর মধ্যে পার্থক্য কোথায়? ছেলেটির মা যখন বেঁচে ছিল তখনও তো সে তার মা-বাবার আদর স্নেহ থেকে বঞ্চিত ছিল। কোন সাংবাদিক, কোন রাজনীতিবিদ কি তার খবর নিয়েছেন? দুঃখিত, কেনই বা তার খবর আপনারা নিবেন। সে তো আর কোন সেলিব্রিটির সন্তান না। তার মা-বাবা সামান্য শ্রমিক। দুইজনে মিলে ৫-৬ হাজার টাকা বেতন পেত। দেশ ও দশের উন্নয়নে তার কি কোন ভূমিকা আছে? তাকে নিয়ে বিরোধী দল তো রাজনীতি করতে পারবে না, তাই তাকে দেখতে যাবেনা কোন বিরোধী দলীয় নেতা।

একজন মিশুক মনির, একজন তারেক মাসুদের জন্য কত কিছু করলাম। (তাদের প্রতি সম্পুর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি বা তাদের অসম্মান করার জন্য বলছি না)। কত মানববন্ধন, কয়েকদিন জুড়ে টিভিগুলাতে কত স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠান। একটি টেলিভিশন তো ২৪ ঘন্টা করে কয়েকদিন এই ব্যাপারেই অনুষ্ঠান প্রচার করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সেই একই দূর্ঘটনায় গাড়ী চালক মুস্তাফিজ, তারেক মাসুদের প্রোডাকশন ম্যানেজার ওয়াসিম ও কর্মী জামালও নিহত হয়েছিলেন। তাদের কথা কি আমরা কেউ লিখেছি? কেউ কি তাদের খবর নিয়েছেন? কেনই বা নিবেন? তারা তো মানুষ না। তারা হলেন চাকর। দরিদ্রতা তাদের জন্য পাপ। কিন্তু এই তারেক মাসুদ সমাজের এই নিচু স্তরের মানুষদের নিয়েই কাজ করেছেন।

আজকের বাংলাদেশে দৈনিক কতজন মানুষ খুন হচ্ছেন? আমার চাইতে আপনারা সাংবাদিকরাই এই হিসাবটা ভাল জানেন। বিভিন্ন কারণে এই খুন গুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে যেমন: পারিবারিক, রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক, ব্যক্তিগত, প্রকাশ্য ইত্যাদি। মেহেরুন রুনি ও সাগর সরোয়ার এর হত্যাকান্ডটি কোন ধাপে ফেলবেন? প্রাথমিকভাবে যা বুঝা যাচ্ছে তা হল যারা তাদের খুন করেছে তারা তাদের পূর্ব পরিচিত ছিল। অর্থাৎ আমরা এই হত্যাকান্ডটিকে পারিবারিক/ ব্যক্তিগত হত্যাকান্ডের কাতারে ফেলতে পারি। কিন্তু পর দিন আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কি থেকে কি বুঝলেন, পুলিশকে আন্দাজে একটা নির্দেশ দিলেন। ৪৮ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে। আর আমাদের সাংবাদিক ভাইয়েরাও সেই অনুযায়ী নাচতে শুরু করলেন। কাউন্ট ডাউন্ড শুরু করলেন। ১২ ঘন্টা বাকী, ১০ ঘন্টা বাকী। এর মধ্যে গ্রেফতার না করতে পারলে হেন করে ফেলব, তেন করে ফেলব ইত্যাদি। সেই সাথে তাল মেলালো আমাদের বিরোধী দল। ৪৮ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতারে ব্যর্থ। ব্যস্ শুরু হল এবার নতুন দাবী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। দুইজন সাংবাদিক ব্যক্তিগত কারণে নিজ বাসভবনের সুরক্ষিত স্থানে হত্যা হলেন তার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে? কী আজব কথা? দেশে দৈনিক অনেক হত্যাকান্ড ঘটছে। সেটি প্রকাশ্যে হচ্ছে। এর মধ্যে অনেক রাজনৈতিক হত্যা কান্ড ঘটছে। পুলিশ কাস্টডিতে আসামী মারা যাচ্ছে। একজন জনপ্রিয় পৌর মেয়র মারা গেলেন তার জন্য সাংবাদিকরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইলেন না। কয়েকদিন আগে ছাত্রলীগের হাতে শিরির কর্মী মারা গেল, ছাত্রলীগ কর্মীর হাতে ছাত্রলীগ কর্মী মারা গেল তার জন্য সাংবাদিকরা মন্ত্রীর পদত্যাগ চাইলেন না। তারা পদত্যাগ চাইছেন দুইটি ব্যক্তিগত হত্যাকান্ডের জন্য। আজব দেশে বসবাস করছি আমরা। সাংবাদিক সমাজের বিবেক কি লোপ পেয়েছে? নাকি তারা কোন একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে চাটুকারী করছেন। নাকি তারা স্বার্থপর হয়ে গেছেন। আপনারা রাস্তা বন্ধ করে প্রতিবাদ করছেন। আপনারা আমাদের কেন ভোগাচ্ছেন। আপনারা না হয় কর্ম বিরতি করলেন রাস্তা বন্ধ করে। কিন্তু সেই রাস্তা দিয়ে তো আমাকেও আমার কর্মক্ষেত্রে যেতে হয়। আমার সন্তানটিতো সেই রাস্তা দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করে। আমি অসুস্থ হলে তো সেই রাস্তা দিয়ে হাসপাতালে যাই। তাহলে আমাকে কেন ভোগাচ্ছেন? আমি বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক, তাই? আপনাদের দৃষ্টিতে আমি মানুষ নই। আরে ভাই মন্ত্রীর বাড়ী ঘেরাও করেন। তার গাড়িতে ঢিল মারেন। তাকে ভোগান। আমাকে কেন ভোগাচ্ছেন?

“হত্যাকাণ্ডের তিনদিন পার হলেও খুনীরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মোশাররফ হোসেন অবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।” (সুত্র- বিডিনিউজ২৪)। শ্রদ্ধেয় মোশাররফ হোসেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে ৩১ বছর আগে। ৩১ বছরের মধ্যে ১০ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। কই তার হত্যাকারীদের একজনকেও তো ধরতে পারলেন না। সেখানে আপনি তিনদিনের মধ্যে সেটা আশা করেন? এই হত্যাকান্ডে রাজনীতির কোন মশলা নাই। তাই একে নিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ নাই। অহেতুক ব্যর্থ চেষ্টা করবেন না। আর কতদিন আপনারা লাশের রাজনীতি করবেন। প্রধানমন্ত্রী মেঘের দায়িত্ব নিয়েছেন। এটাকে আপনারা লোক দেখানো বলেছেন। এক কাজ করুন, আপনারা তাহলে ঐ গার্মেন্ট কর্মীর ছেলেটির দায়িত্ব নিন। ভোটের রাজনীতিতে এই ছেলেটিও আপনাদেরকে অনেক ভোট এনে দিবে। এমন অনেক বাচ্চা শিশু প্রতিদিন এতিম হচ্ছে আপনারা তাদেরও দায়িত্ব নিন। এগুলো কোন সাংবাদিক, কোন রাজনীতিবিদ বা কোন সেলিব্রিটির বাচ্চা না। এরা মানুষের বাচ্চা। ঐ গার্মেন্টস কর্মীরাই গড়ে তুলছে আপনার উন্নয়ন, গড়ে তুলেছে সভ্যতা, আনছে সমৃদ্ধি। তারা মানুষ। আমরা সাংবাদপত্র পড়ে, টেলিভিশন দেখে আপনাদের সাংবাদিক বানাই। ভোট দিয়ে রাজনীতিবিদ বানাই। সিনেমা হলে গিয়ে চলচ্চিত্রকার ও সেলিব্রেটি বানাই। নাগরিক হিসেবে আমারও অনেক অধিকার আছে। সেটি আদায়ে আপনারা সহযোগিতা করুন।

সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১২

তাজমহল আর পদ্মা সেতুঃ বিপজ্জনক মিল

Written BY- জাহেদ-উর-রহমান
সোমবার ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১২, বিকাল ৩:২৫



ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলে একবার তাজমহল নির্মানের ইতিহাস নিয়ে একটা অনুষ্ঠান দেখেছিলাম। সেখানে একজন ভারতীয় ইতিহাসবিদ, যিনি তাজমহলের ঐতিহাসিক পটভূমি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছিলেন, বর্ননা করছিলেন তাজমহল নির্মান করা নিয়ে সম্রাট শাহজাহানের ‘জেদ’ তার রাজ্যের মানুষদেরকে কী দূর্দশায় ফেলেছিল।

প্রিয়তমা স্ত্রীর স্মৃতি চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য (বা নিজে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকার জন্য) যেভাবে তাজমহল নির্মানের পরিকল্পনা তিনি করেন তার প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল সীমাহীন। অর্থ, মনোযোগ সব নিয়ে তিনি ঝঁপিয়ে পড়েন তাজমহল বানানোর পেছনে; অনেকটাই ভুলে যান রাজ্যের কথা, প্রজাদের কথা। প্রথম বেশ কিছুদিন তিনি কোষাগার থেকে এর নির্মান ব্যয়ের সংস্থান করতে পারছিলেন, কিন্তু একসময় রাজকোষও প্রায় শুন্য হয়ে যায়। শাহজাহানের মাথায় কিন্তু ততদিনে তাজমহলের ভুত পুরোপুরি চেপে গেছে।

এরপর বাড়তি অর্থ সংস্থান করার জন্য তিনি নতুন নতুন মোটা অঙ্কের খাজনা বসাতে থাকেন; বাদ যায়নি নিতান্ত প্রান্তিক মানুষরাও। তারপর একদিন বিরাট একটা অঞ্চলে দূর্ভিক্ষ দেখা দেয়। কিন্তু কোন কিছুতেই দমেন না সম্রাট শাহজাহান। এটা আজ ঐতিহাসিক সত্য যে, এক তাজমহল ওই অঞ্চলে বেশ বড় একটা দূর্ভিক্ষের জন্য দায়ী। শেষ পর্যন্ত ‘কপাল জোরে’ বেঁচে যায় ওই রাজ্যের মানুষ – শাহজাহান পুত্রের হাতেই ক্ষমতচ্যুত হন। আমরা অনেকেই হয়তো জানি ‘সাদা তাজমহল’ এর পর তার ইচ্ছে ছিল যমুনা নদীর ঠিক উল্টো পাড়ে একই ডিজাইন এবং একই আকারের ‘কালো তাজমহল’ তৈরি করা। ‘কালো তাজমহল’ তৈরি করা শুরু করতে পারলে ওই রাজ্যের মানুষদের কী যে হোত!

আমি নির্বোধ নই। না, আমি তাজমহলের মত একটা নিতান্ত ব্যক্তিগত এবং অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পকে আমাদের দেশের জনগনের জন্য অতি দরকারী প্রকল্প পদ্মা সেতুকে তুলনা করছি না। আমি আসলে উপরের গল্পে একজন সম্রাটের জেদটুকু দেখাতে চেয়েছি, কারন পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের দেশে ঠিক একই ধরনের জেদঘটিত কর্মকান্ড ঘটছে, যার মাশুল সাধারণ জনগনকেই দিতে হবে।
সরকারের নির্বাচনী ওয়াদার একটি পদ্মা সেতু করার জন্য সরকারের সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীকে শুরু থেকেই ভীষণ করিৎকর্মা দেখেছি। এমনকি রাস্তা মেরামত করার মত জরুরী কাজ বাদ দিয়েও তিনি কোমর বেঁধে নেমে পড়েছিলেন ওই সেতুর কাজ শুরু করতে। ওদিকে তার অবহেলায় এই দেশের প্রায় সব সড়ক-মহাসড়কে অজস্র ‘আবুল’ (পড়ুন গর্ত) তৈরি হয়ে মানুষের যাতায়াত পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, তার বিরুদ্ধে দূর্ণীতির অভিযোগ করে বিশ্বব্যাংক ওই সেতুর অর্থায়ন স্থগিত করে দেয়।
ওই অর্থায়ন স্থগিতের ঘটনা প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের নীতিনির্ধারকদের ‘জেদ’ তৈরি করে। প্রধানমন্ত্রীসহ প্রভাবশালী মন্ত্রীরা নানা কথা বলতে থাকেন – অমুক দেশের সাহায্যে করা হবে, পিপিপি এর মাধ্যমে করা হবে ইত্যাদি। সর্বশেষ মালয়েশিয়া সরকারের সাথে সরকারের বোঝাপোড়া হচ্ছে। আমি ভালভাবেই জানি ‘মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারষ্ট্যান্ডিং’ কোন চুড়ান্ত চুক্তি নয়, কিন্তু তারপরও এই কিছু ব্যাপার আলোচনা করার দরকার আছে।
পত্রিকা এবং টিভির খবরে জানা গেছে এই সেতু তৈরিতে মালয়েশিয়া সরকার নিজেরা কোন অর্থ বিনিয়োগ করবে না। বরং তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের একটা কনসোর্টিয়াম তৈরি করবে যারা বানিজ্যিকভাবেই অর্থায়ন নিশ্চিত করবে (এই ধরনের বানিজ্যিক অর্থায়নের সুদের হার কত হতে পারে ভেবে দেখুন) । সেতু বানানোর পরে ৫০ বছর পর্যন্ত তারা টোল আদায় করে লাভসহ তাদের বিনিয়োগ তুলে নেবে। এছাড়াও শুল্ক ভর্তুকি, নির্মান যন্ত্রপাতির শুল্কমুক্তি সহ বেশকিছু শর্ত আছে তাদের।
বিশ্বব্যাংকের প্রতি আমার কোন প্রীতি নেই, বরং আমি এর বিদ্বেষী। কিন্তু এটা মানতেই হবে যে পদ্মা সেতুর জন্য তাদের শর্ত তুলনামূলকভাবে অনেক সহজ ছিল। তাদের সুদের হার হোত ০.৫% (আপনি ভুল পড়ছেন না), এবং সেই সুদ পরিশোধের মেয়াদ হত ৪০ বছর। সেতুর টোল আমরা নিজেরাই তুলতে পারতাম, এতে এই খাতেও আমাদের আয় থাকতো। আর ঐ টোল অবশ্যই মালয়েশিয়ার টোলের চাইতে অনেক কম হোত। কিন্তু মালয়েশিয়ার প্রস্তাবে সেই আশায় গুড়েবালি আগামী ৫০ বছরের জন্য।
খুব ভাল হোত আমরা যদি বিশ্বব্যাংক আর আই এম এফ কে বাদ দিয়ে আমাদের অর্থনীতি চালাতে পারতাম। আমাদের দেশে এখনো বিশ্বব্যাংকের অনেক প্রকল্পের কাজ চলছে। আর আই এম এফ এর কাছ থেকে ১০০ কোটি ডলার ঋণ পাবার জন্য তেলের দাম বাড়ানো, ব্যাংক ঋণের সুদের হারের সর্বোচ্চ সীমা তুলে দেয়া সহ যাবতীয় সব নাকে খত দিয়ে যাচ্ছি। এখন বিশ্বব্যাংককে ক্ষেপিয়ে আমাদের সামনে আর বড় বিপদ আসতে পারে; অন্যান্য দাতা সংস্থাও অন্যান্য প্রকল্পে আমাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। খেয়াল করেছেন হয়তো বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন স্থগিত করার সাথে সাথে জাইকা এবং এ ডি বি ও অর্থায়ন স্থগিত করেছে। বিশেষ করে এই সময়ে ওদেরকে ক্ষেপানোটা আদৌ যৌক্তিক হয়নি যখন অর্থনীতির অবস্থা ভীষন নাজুক।
ধরে নিলাম বিশ্বব্যাংক অযৌক্তিক কারনেই এই অর্থায়ন স্থগিত করেছে – আবুল হোসেন সাধু-সন্ত। কিন্তু এখন এই তাড়াহুড়া কেন এই সেতু নিয়ে? এটা নাই হোল এখন, পরে করা যেত; সরকার তো তার অনেক নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিই রক্ষা করেনি – এটা জনগনকে বুঝিয়ে বললেই হোত। এতে অন্তত আগামী ৫০ বছরের জন্য আমরা এরকম একটা চুক্তির মধ্যে ঢুকে যেতাম না।
কিন্তু না এটা করতেই হবে। যেমন করা হয়েছিল তেল ভিত্তিক অনেকগুলো কুইক রেন্টাল বিদ্যৎকেন্দ্র, ভবিষ্যতের জন্য ‘ইনডেমনিটি’ দিয়ে। ওই বিদ্যৎকেন্দ্রগুলো দেশের অর্থনীতিকে লাটে তুলে দিয়েছে। এখন এই সেতু এমন শতভাগ বানিজ্যিকভিত্তিতে করার ফলও হবে ওই বিদ্যৎকেন্দ্রগুলোর মতোই। তারপরও আমাদের সরকার এটা করবে কারন ‘মেগা’ পোজেক্টের লুটপাটও ‘মেগা’ই হয়। ফুলে ফেঁপে উঠবে এর সাথে জড়িত অনেকর পকেট। আর ভোটের আগে এই সেতুর কাজ শুরুর কথা বলে আর সব ব্যর্থতাকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টাতো করা যাবেই।
গত চল্লিশ বছর এই দেশে কখনোই প্রকৃত গনতন্ত্র ছিল না। ছিল জবর দখলকারী, আর নির্বাচিত স্বৈরতন্ত্র। এদেশ আসলে শাসন করে গেছেন, যাচ্ছেন সম্রাট আর সম্রাজ্ঞীরা। তাই মেজাজ-মর্জিতে, জেদে তাদের আচরন সেরকমই। এক সম্রাট শাহজাহানের জেদের কথাতো বললামই ওপরে, আর আমরা এখনও দেখছি একই আচরণ। সেই সময়ের প্রজাদের কী হবে না হবে তাতে কিছু আসে যায়নি সম্রাটের, ঠিক তেমনই আসে যায় না এই সময়েও; আসবে যাবে না আরো কতদিন কে জানে!